ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে, ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার ও কি উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা, Dhoni Poriborton Koto Prokar প্রশ্ন ও উত্তর For বিসিএস, BCS & Bank Job.
ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে
একটি ভাষায় কথা বলার সময় বিভিন্ন শব্দ পাশাপাশি উচ্চারণকালে, একটি শব্দের ধ্বনির প্রভাবে অন্য আরেকটি শব্দের উচ্চারণের পরিবর্ধন,সংযোজন, বিয়োজন বা কোনেরূপ বিকৃতি ঘটে তখন তাকে ধ্বনি পরিবর্তন বলে। যেমন: পর্তুগিজ শব্দ ‘আনানস’ বাংলায় উচ্চারনের সময় ‘আনারস’ হয়েছে। এটি একটি ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরণ।
ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার:
বাংলা ভাষায় ধ্বনি পরিবর্তন প্রধানত ৩ প্রকার-
১) ধ্বন্যাগম
২) ধ্বনিলোপ ও
৩) ধ্বনি রূপান্তর।
নিম্নোক্ত চিত্রে দেখানো হলো:
ধ্বনি পরিবর্তন (1. ধ্বন্যাগম)
১) ধ্বন্যাগম:কথা বলার সময় শব্দের শুরুতে, মাঝে বা শেষে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে ধ্বন্যাগম বা ধ্বনির আগমন বোঝায়। ধ্বন্যাগম আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।
যথা: আদি স্বরাগম, মধ্য স্বরাগম, অন্ত্যস্বরাগম, অপিনিহিতি ও অসমীকরণ।
আদি স্বরাগম (Prothesis) : উচ্চারণের সুবিধার্থে বা কথা বলার সময় বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে ( অর্থাৎ শব্দের শুরুতে) স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি স্বরাগম।
যেমন: স্কুল> ইস্কুল , স্ত্রী> ইস্ত্রী , স্নান> সিনান , স্পর্ধা> আস্পর্ধা , স্টেশন> ইস্টিশন ইত্যাদি।
মধ্য স্বরাগম ( Anaptyxis) : কথা বলার সময় যেকোনো শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনির আগমন ঘটে। সাধারণত এসকল শব্দ সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি হয়ে থাকে। অর্থাৎ সহজ ভাষায়, সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে মধ্য স্বরাগম বলে।
যেমন: ধর্ম> ধরম, রত্ন> রতন, স্বপ্ন> স্বপন, হর্ষ> হরষ, প্রীতি> পিরীতি, ক্লিপ> কিলিপ, ফিল্ম> ফিলিম, গ্রাম> গেরাম, প্রেক> পেরেক, স্রেফ> সেরেফ প্রভৃতি।
অন্ত্যস্বরাগম (Apothesis) : কথা বলার সময় শব্দের শেষে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে।
যেমন: দিশ> দিশা, সত্য> সত্যি, বেঞ্চ> বেঞ্চি, পোখত> পোক্ত, ইত্যাদি।
[ N:B: মনে রাখার কৌশল : আদি স্বরাগমে শব্দের শুরুতে একটি স্বরধ্বনি যোগ হয়, মধ্য স্বরাগমে মাঝখানে স্বরধ্বনি যোগ হয় এবং অন্ত্যস্বরাগমে শেষে স্বরধ্বনি যোগ হয়। ]
অপিনিহিতি (Apenthesis) : কথা বলার সময় শব্দের পরের ‘ই’ কার বা ‘উ’ কার আগে উচ্চারিত হলে, এরূপ ধ্বনি পরিবর্তনকে অপিনিহিতি বলে।
যেমন: জালিয়া> জাইল্যা, সাধু> সাউধ, আশু> আউশ, আজি> আইজ, রাতি> রাইত, ইত্যাদি।
অসমীকরণ (Dissimilation) : কথা বলার সময় একটি শব্দের মধ্যে পরপর একই স্বরধ্বনি থাকলে, একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করতে ও শব্দের মাধুর্য বৃদ্ধি করতে সেই শব্দদিত্বের মাঝখানে আারেকটি স্বরধ্বনি যোগ করা হয়। একেই অসমীকরণ বলে।
যেমন: ঝন+ঝন = ঝনাঝন, ধপ+ধপ = ধপাধপ, টপ+টপ = টপাটপ, প্রভৃতি।
ধ্বনি পরিবর্তন (2. ধ্বনিলোপ বা ধ্বনির বিয়োজন)
২) ধ্বনিলোপ বা ধ্বনির বিয়োজন: কথা বলার সময় স্বাভাবিকভাবে বা উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের শুরুতে, মাঝে বা অন্তের কোনো ধ্বনি বিলীন হয়ে গেলে তাকে ধ্বনিলোপ বলে।
যথা: সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বা ধ্বনিলোপ, ব্যঞ্জনচ্যুতি ও অন্তর্হতি।
সম্প্রকর্ষ/ স্বরলোপ/ ধ্বনিলোপ : অনেক সময় দ্রুত কথা বলায় সময় শব্দের উচ্চারণের সময়, শব্দের শুরুতে, মাঝের বা শেষের স্বরধ্বনি লোপ পায় তখন তাকে সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বলে। স্বরলোপ হলো স্বরাগমের বিপরীত প্রক্রিয়া। লোপ অনুসারে এই স্বরলোপ আাবার তিন প্রকার।
আদিস্বরলোপ (Aphesis) : শব্দের উচ্চারণকালে, শব্দের শুরুতে বা প্রথমদিকের স্বরধ্বনি বিলীন হয়ে যাওয়াকে আদিস্বরলোপ বলে। এটি আদিস্বরাগমের বিপরীত।
যেমন : উদ্ধার >উধার >ধার, অলাবু >লাবু >লাউ, ইত্যাদি।
মধ্যস্বরলোপ (Syncope) : দ্রুত শব্দ উচ্চারণের জন্য শব্দের মাঝের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরলোপ বলে। এটি মধ্য স্বরাগমের বিপরীত প্রক্রিয়া।
যেমন : অগুরু >অগ্রু, গামোছা >গামছা, সুবর্ণ > স্বর্ণ, ইত্যাদি।
অন্ত্যস্বরলোপ (Apocope) : কথা বলার সময় কোনে শব্দের শেষের বা অন্তিম স্বরলোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরলোপ বলে। এটি অন্তস্বরাগমের বিপরীত।
যেমন : আজি >আজ, আাশা >আশ, চারি >চার।
ব্যঞ্জনচ্যুতি : কোনে শব্দের পাশাপাশি একই উচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, তার মধ্যে একটি লোপ পায় ( ভাষার ধ্বনিগত মাধুর্য বজায় রাখতে), এ ধরনের ধ্বনিলোপকে ব্যঞ্জনচ্যুতি বলে।
যেমন : বড় দাদ > বড়দা, বউদিদি > বউদি, প্রভৃতি।
অন্তর্হতি : পদের মধ্যকার কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্তর্হতি বলে।
যেমন: ফলাহার > ফলার, আলাহিদা > আলাদা, প্রভৃতি।
ধ্বনি পরিবর্তন (3. ধ্বনি রূপান্তর)
৩) ধ্বনি রূপান্তর : বাক্যস্থিত শব্দগুলোর মধ্যে, উচ্চারণকালে বিভিন্ন কারন বশত কোনো শব্দের একটি ধ্বনির প্রভাবে অন্য আরেকটি ধ্বনির পরিবর্তন বা রূপান্তর ঘটলে তাকে ধ্বনি রূপান্তর বলা হয়। ধ্বনি রূপান্তর অনেক ধরনের হয়ে থাকে।
যথা: স্বরসঙ্গতি, ধ্বনি বিপর্যয়, সমীভবন, বিষমীভবন, ব্যঞ্জনদ্বিত্ব, ব্যঞ্জন বিকৃতি, অভিশ্রুতি, ক্ষীনয়াণ ও পীণায়ন।
স্বরসঙ্গতি (Vowel Harmony) : একটি স্বরের প্রভাবে অন্য আরেকটি স্বরের পরিবর্তিত হওয়াকে স্বরসঙ্গতি বলে। স্বরসঙ্গতিকে আাবার চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা: প্রগত স্বরসঙ্গতি, পরাগত স্বরসঙ্গতি, মধ্যগত ও অন্যান্য।
প্রগত স্বরসঙ্গতি (Progressive) : প্রথম স্বর অনুযায়ী শেষের স্বর বা অন্ত্যস্বর পরিবর্তন হওয়াকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন : শিকা >শিকে, ইচ্ছা >ইচ্ছে, তুলা >তুলো, মুলা >মুলো, মিঠা >মিঠে ইত্যাদি।
পরাগত স্বরসঙ্গতি (Regressive) : শেষের স্বরের প্রভাবে প্রথম স্বরের পরিবর্তিত হওয়াকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন : দেশি > দিশি, আখো >আখুয়া >এখো, ইত্যাদি।
মধ্যগত স্বরসঙ্গতি (Mutual) : প্রথম স্বরধ্বনি ও শেষের স্বরধ্বনির কারনে মাঝের বা মধ্যবর্তী স্বরের পরিবর্তনকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে।
যেমন: বিলাতি > বিলিতি।
অন্যান্য স্বরসঙ্গতি (Reciprocal) : অন্য কোনো স্বরের জন্য শব্দের পরিবর্তনকে বোঝায়। যেমন : মুজা > মুজো।
ধ্বনি বিপর্যয় / বর্ণ বিপর্যয় : কথা বলার সময় বাক্যস্থিত শব্দের মধ্যকার ধ্বনি স্থান পরিবর্তন করলে, অর্থাৎ একটি শব্দের পূর্বধ্বনি, পরবর্তী ধ্বনির সাথে পরস্পর স্থান পরিবর্তন করলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বা বর্ণ বিপর্যয় বলে।
যেমন : লাফ >ফাল, রিক্সা >রিশকা, বাক্স > বাসক, পিশাচ >পিচাশ, ইত্যাদি।
সমীভবন (Assimilation) : একটি শব্দের মধ্যকার দুটি ভিন্ন রকম ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে সামান্য সমান রূপ ধারণ করলে তাকে সমীভবন বলে। সমীভবন আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা: প্রগত, পরাগত ও মধ্যগত।
প্রগত সমীভবন : যখন শুরুর ধ্বনির (পূর্ব ধ্বনির) প্রভাবে পরের ধ্বনি পরিবর্তন হয় তখন তাকে প্রগত সমীভবন বলে। যেমন: পক্ব >পক্ক ( পকক), চক্র >চক্ক, পদ্ম > পদ্দ, ইত্যাদি।
পরাগত সমীভবন : যখন পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির (আগের ধ্বনির) পরিবর্তন হয়, তখন তাকে পরাগত সমীভবন বলে।
যেমন: জন্ম > জম্ম, কাঁদনা > কান্না, তৎ+জন্য = তজ্জন্য, উৎ+মুখ = উন্মুখ, তৎ+হিত = তদ্ধিত, গল্প >গপ্প, রাঁধনা > রান্না, ইত্যাদি।
মধ্যগত সমীভবন : যখন দুটি ধ্বনি পরস্পরের প্রভাবে উভয়ই পরিবর্তন হয় তখন তাকে মধ্যগত সমীভবন বলে। কিছু স্থানে মধ্যগত সমীভবনকে, অন্যান্য সমীভবন ও বলে।
যেমন: বিদ্যা > বিজ্জা, সত্য > সচ্চ।
বিষমীভবন (Dissimilation) : একই শব্দে পাশাপাশি একই ধরনের দুইটি বর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন: শরীর >শরীল, লাল > নাল ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনদ্বিত্ব (Long Consonant) : কিছু কিছু সময় উচ্চারণে জোর দেওয়ার জন্য শব্দের মধ্যকার ব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। এরকম ধ্বনি পরিবর্তনকে ব্যঞ্জনদ্বিত্ব বা দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বলা হয়।
যেমন: সকাল > সক্কাল, পাকা > পাক্কা, ইত্যাদি।
ব্যঞ্জন বিকৃতি : ব্যঞ্জন বিকৃতি বলতে শব্দের মধ্যকার ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তন হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনির ব্যবহারকে বোঝায়। যেমন: কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা, ধাইমা > দাইমা, প্রভৃতি।
অভিশ্রুতি (Umlaut) : বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং সেই অনুযায়ী স্বরধ্বনির পরিবর্তন হলে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন: করিয়া > কইরিয়া/ কইরা > করে।
ক্ষীণায়ন : ক্ষীণয়ান বলতে শব্দের মধ্যকার মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হলে তাকে বোঝায়।
যেমন: কাঠ > কাট, পাঠা > পাটা ইত্যাদি।
পীনায়ন : শব্দের মাঝের অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হলে একে পীনায়ন বলে।
যেমন: পুকুর > পুখুর, কাঁটাল > কাঁঠাল প্রভৃতি।
ধ্বনি পরিবর্তন প্রশ্ন উত্তর
বিগত বছরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় (ধ্বনি পরিবর্তন থেকে) আসা প্রশ্ন ও উত্তর :
১) Prothesis এর বাংলা প্রতিশব্দ কী? উ: আদি স্বরাগম।
২) ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার? ও কি কি? উ: ৩ প্রকার। ধ্বন্যাগম, ধ্বনিলোপ ও ধ্বনি রূপান্তর।
৩) মধ্য স্বরাগম এর সমার্থক শব্দ কী? উ: বিপ্রকর্ষ ও স্বরভক্তি।
৪) আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে কোন ধরনের স্বরসঙ্গতি হয়? উ: প্রগত স্বরসঙ্গতি।
৫) মিঠা > মিঠে কোন ধরনের ধ্বনি পরিবর্তন ? উ: স্বরসঙ্গতি।
৬) শব্দের মধ্যে দুইটি ব্যঞ্জনের পরস্পর স্থান পরিবর্তন করলে ( রিক্সা > রিসকা) কোন ধরনের পরিবর্তন বোঝায়? উ: ধ্বনি বিপর্যয়।
৭) Apenthesis অর্থ কি? উ: অপিনিহিতি।
৮) দুটি সমবর্নের একটি পরিবর্তনকে কি বলে? উ: বিষমীভবন।
৯) পর্তুগিজ ‘আনানস’ বাংলায় ‘আনারস’ এটি কি ধরনের পরিবর্তন? উ: ধ্বনিতাত্ত্বিক।
১০) ফলাহার > ফলার কোন ধরনের পরিবর্তন? উ: বর্ণলোপ / অন্তর্হতি।
১১) মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনির মতো উচ্চারিত হলে, তাকে কি বলে? উ: ক্ষীণায়ন।
১২) তৎ + হিত = তদ্ধিত কোন ধরনের পরিবর্তন? উ: সমীভবন।
১৩) শরীর> শরীল কোন ধরনের পরিবর্তন? উ: বর্ণ বিপর্যয় / ধ্বনি বিপর্যয়।
১৪) ‘ধার’ শব্দটি কোন পরিবর্তন প্রক্রিয়ার দৃষ্টান্ত? উ: সম্প্রকর্ষ।
১৫) স্নান > সিনান কোন রীতিতে পরিবর্তন হয়েছে? উ: স্বরাগম।
১৬) ‘পেরেক’ শব্দটি কোন ধরনের ধ্বনি পরিবর্তন থেকে এসেছে? উ: স্বরভক্তি।
১৭) ফিল্ম> ফিলিম কোন ধরনের ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরণ? উ: মধ্য স্বরাগম।
১৮) স্বরলোপ কোনটির বিপরীত প্রক্রিয়া? উ: স্বরাগম
১৯) পিশাচ > পিচাশ কোন ধরনের পরিবর্তন? উ: ধ্বনি বিপর্যয়।
২০) জালিয়া > জাইল্যা কোন ধরনের ধ্বনি পরিবর্তন? উ: অপিনিহিতি।